নিজস্ব প্রতিনিধি ১৭ই জানুয়ারী ২০১৭
চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বাংলা চলচ্চিত্র জগতের একজন প্রথম সারির অভিনেতা। উত্তম কুমার পরবর্তী জমানায় বাংলা চলচ্চিত্র জগতে যে ক'জন তরুণ অভিনেতা বা নায়কের জন্ম হয় তাদের মধ্যে চিরঞ্জিত অন্যতম। চিরঞ্জিত মূলত অ্যাকশান ধর্মী বাংলা ছবিতে নিজেকে সফলভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। বর্তমানে তিনি তৃণমূল দলের হয়ে একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এবং বিধায়ক।
ছোটবেলা
১৯৫৫ সালের ২রা নভেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। চিরঞ্জিত চক্রবর্তী কলকাতার শ্যামবাজার অঞ্চলের মিত্র প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তী হন। অভিনয়ের কারণে তিনি ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারেন নি এবং যাদবপুরের শিক্ষা মাঝপথেই বন্ধ করে দেন।
কেরিয়ার
বাংলা সিনেমার অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী তার কেরিয়ার জীবন শুরু করেন একজন টেলিভিশান সংবাদপাঠক হিসেবে। এরপর কিছুদিন তিনি বাংলার স্বনামধন্য পত্রিকা দেশ পত্রিকাতেও কিছুদিন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন। সিনেমার পাশাপাশি তিনি যাত্রাতেও যথেষ্ট সফল্ভাবে অভিনয় করেন বহুকাল। অভিনয়ে আসার আগে তিনি সত্যজিত রায়ের সাথে অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছিলেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু সিনেমা পরিচালনাও করেছেন। তার পরিচালিত সিনেমাগুলি হল
রাজনৈতিক জীবন
২০১১ সালে তিনি তৃণমূল দলের হয়ে বারাসাত বিধানসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দীতা করেন এবং জয়যুক্ত হন। বারাসাতের মহিলাদের সাথে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনায় তিনি বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
উল্লেখযোগ্য সিনেমা
তিনি প্রায় শতাধিক সিনেমায় নায়কের চরিত্র অভিনয় করেছেন। মূলত বানিজ্যিক ঘরানার সিনেমাতেই তিনি বেশী সফল। ঋতুপর্ণ ঘোষের সাথে বাড়িওয়ালী সিনেমায় তার অভিনয় অন্য ধারার চলচ্চিত্রপ্রেমীদেরকে তার অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট করে। তবে ২০১৪ সালে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের চতুষ্কোণ ছবিতে তিনি সব থেকে বেশী আলোচিত হন এবং তারপর নানান অন্যরকম চরিত্রে তাকে কাস্ট করা শুরু করেন নানান পরিচালকেরা। এরপরেই পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের কিরিটী রায় চরিত্রে তার মনোনয়ণ করেন এবং যথেষ্ট সফল হন। অশ্লীলতার দায়ে (১৯৮৩) , অন্তরালে (১৯৮৫) , অমরকন্টক (১৯৮৬) , প্রতীক (১৯৮৮) , মর্যাদা (১৯৮৯) , পাপী (১৯৯০) , বেঁদের মেয়ে জ্যোৎস্না (১৯৯১) , রক্তলেখা (১৯৯২) , লাল পান বিবি (১৯৯৪) , কেঁচো খুঁড়তে কেউটে (১৯৯৫) , সবার উপরে মা (১৯৯৭) , বাড়িওয়ালী (২০০১) , চোরে চোরে মাসতুতো ভাই (২০০৫) , চতুষ্কোণ (২০১৪) , কিরিটী রায় (২০১৬) , ধুমকেতু (২০১৭)
নায়িকা
তার চলচ্চিত্র জীবনে তিনি বহু নায়িকার সাথে অভিনয় করেছেন তার মধ্যে দেবশ্রী রায়, রূপা গাঙ্গুলী, মুনমুন সেন, শতাব্দী রায়, রচনা ব্যানার্জী ইত্যাদি নায়িকারা উল্লেখযোগ্য। রূপা গাঙ্গুলীর সাথে প্রতীক সিনেমার বৃষ্টিভেজা গানটি আজনো বাংলা প্রেমের গানের লিস্টে এক অন্যতম জায়গা করে রেখছে।
সংলাপ
চিরঞ্জিত চক্রবর্তী মূলত পারিবারিক মূল্যবোধের সিনেমায় বেশী কাজ করেছেন। পরিবারের জন্যে তিনি সর্বদা বলি প্রদত্ত। নিজের ভাই বোনেদের উন্নতি সাধনে তিনি চিরকালীন আত্মত্যাগ করে গেছেন। সংসারের বড় ভাই হিসেবে একাধারে পারিবারিক বন্ধন অটুঁট রাখা এবং অন্যধারে পারিবারিক শত্রুকে বিনাশ করাই ছিল তার মূল লক্ষ্য। তার একটি বিখ্যাত সংলাপ হল , 'ভাই, বউ হারালে বউ পাওয়া যায় রে, কিন্তু মা হারালে মা পাওয়া যায় না।' এই সংলাপ এক সময় যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়। এবং এটি এতটাই জনপ্রিয় হয় যে পরবর্তীকালে চতুষ্কোণ ছবিতে এই ডায়লগের রেফারেন্সে আরও একটি জনপ্রিয় ডায়লগ রচনা করা হয়। এই ডায়লগ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচুর Troll দেখতে পাওয়া যায়।
টেলিভিশান
২০১৫ সালে Zee Bangla-র জন্যে তিনি একটি মজাদার গেম শোয়ের অ্যাঙ্কারিং করেন। কে হবে বাংলার সেরা ডিটেকটিভ এই গেম শোয়ে প্রতিযোগীরা তাদের উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন রাউন্ড খেলতেন এবং শেষ পর্যন্ত যিনি টিকে থাকতেন তাকে দেওয়া হত বাংলার সেরা ডিটেকটিভের অ্যাওয়ার্ড। এই গেম শো-টি অন্যান্য সকল গেম শো-য়ের থেকে যথেষ্ট আলাদা এবং সফল।
Full Film List of Bengali Actor Chiranjit Chakraborty